প্রথম বায়জিদ | ৪র্থ উসমানীয় সুলতান
উসমানীয়া সুলতান প্রথম বায়জিদ:
প্রথম বায়জিদ ছিলেন উসমানিয় সম্রাজ্যের ৪র্থ সুলতান। উনার ডাকনাম ইলদিরিম যার অর্থ "বজ্রপাত বা বজ্রকঠিন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৩৬০ সাল এর ৮ মার্চ। তার পিতা ছিলেন সুলতান প্রথম মুরাদ। মাতার নাম গুলচিচেক হাতুন। পিতা মুরাদের মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি সিংহাসন লাভ করেন। ১৩৮৯ থেকে ১৪০২ সাল পর্যন্ত উসমানীয় সম্রাজ্য শাসন করে তিনি একটি সুবিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।
কুতাহিয়ার গভর্নর হিসেবে সুলতান বায়েজীদ প্রথম বড় দায়িত্বপালন শুরু করেন। কারামানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষিপ্রতার জন্য তিনি ইলদিরিম বা বজ্রপাত নামে পরিচিত হয়েছিলেন। কসোভোর যুদ্ধে সুলতান প্রথম মুরাদ নিহত হওয়ার পর বায়েজীদ সিংহাসনে বসেন। এই যুদ্ধ জয়লাভের ফলে সার্বিয়া অঞ্চল উসমানীয় সাম্রাজ্যের দখলে আসে। ১৩৯০ সালে হেমন্ত ও শীতে সুলতান বায়জিদ হামিদ, তেকে ও জেরমিয়ান বেয়লিক অধিকার করে নেন। পাশাপাশি আকশেহির ও নিগদে শহরও অধিকার করেন। তিনি কারামানের রাজধানী কোনিয়া অধিকার করেছিলেন। ১৩৯১ সালে তিনি কারামানের শান্তিপ্রস্তাব গ্রহণ করেন। এরপর বায়েজীদ উত্তরে কাসতামনুর দিকে অগ্রসর হয়ে শহরটি অধিকার করেন। ১৩৮৯ সালে বায়েজীদ বুলগেরিয়া ও উত্তর গ্রিস জয় করেন। ১৩৯৪ সালে তিনি দানিউব নদী অতিক্রম করে এবং ওয়ালাচিয়া আক্রমণ করেন। যদিও এই যুদ্ধে তিনি সফল হতে পারেননি।
১৩৯৪ সালে সুলতান বায়েজীদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন। দ্বিতীয় অবরোধের অংশ হিসেবে আনাদোলুহিসারি দুর্গ ১৩৯৩ থেকে ১৩৯৪ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। এবং ১৩৯৫ সালে দ্বিতীয়বার অবরোধ করা হয়। বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় মানুয়েলের আগ্রহে বায়েজীদকে পরাজিত করার জন্য একটি নতুন ক্রুসেড সংগঠিত করা হয়। এবং এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়, ১৩৯৬ সালে হাঙ্গেরির রাজা সিগিসমুন্ডের নেতৃত্বে খ্রিষ্টান জোটবাহিনী নিকোপলিসের যুদ্ধে পরাজিত হয়।
কনস্টান্টিনোপল এর এই অবরোধ ১৪০২ সাল পর্যন্ত চলে। সুলতান বায়েজীদ পূর্ব দিকে তিমুরি সাম্রাজ্যের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ার কারণে এরপর বাইজেন্টাইনরা অবরোধ থেকে মুক্তি পায়। এসময় ইউরোপে উসমানীয় সাম্রাজ্য এশিয়ায় তোরোস পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বায়েজীদের সেনাবাহিনী মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হত এবং বায়েজীদ মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী শাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৪০০ সালে মধ্য এশিয়ার শাসক তৈমুর লং আনাতোলিয়ার উসমানীয়দের অধীনে বেয়লিকগুলোকে নিজের পক্ষে আনেন। ১৪০২ সালের ২০ জুলাই সংঘটিত আঙ্কারার যুদ্ধে উসমানীয়রা পরাজিত হয় এবং বায়েজীদ বন্দী হন। বায়েজীদের এক পুত্র মুস্তাফা চেলেবি তার সাথে বন্দী হন। তাকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত তিনি সমরকন্দে বন্দী ছিলেন। এরপর বন্দী অবস্থায় ১৪০৩ সালের মার্চে তিনি ইন্তেকাল করেন।
গৃহযুদ্ধঃ
সুলতান বায়জিদের ৪ জন স্ত্রী, ৮ জন ছেলে ও ৫ মেয়ে ছিলো। এরপর যুদ্ধে তৈমুর লং এর কাছে সুলতান বায়জিদ এবং তার পুত্র মুস্তাফা চেলেবি বন্দী হলেও বায়েজীদের ৪ পুত্র সুলাইমান চেলেবি, ঈসা চেলেবি, মুহাম্মদ চেলেবি ও মুসা চেলেবি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে সিংহাসন নিয়ে তাদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। এই গৃহযুদ্ধ হতে সুলতান মুহাম্মদ জয়ের পর তিনি প্রথম মুহাম্মদ হিসেবে সিংহাসনে বসেন।
.
আরো পড়ুনঃ
১। উসমানীয় সম্রাজ্য বা অটোমান সম্রাজ্য
২।সুলাইমান শাহ (আরতুগ্রুল গাজীর পিতা)
৩।আরতুগ্রুল গাজী (ওসমান গাজীর পিতা, উসমানী সম্রাজ্যের রুপকার)
৪। উসমান গাজী (সুলতান প্রথম ওরহান এর পিতা)
৫। প্রথম ওরহান (সুলতান মুরাদের পিতা)
৬। প্রথম মুরাদ (সুলতান বায়জিদ এর পিতা)
.
এই পাতাটি শেয়ার করুন...
প্রথম বায়জিদ | ৪র্থ উসমানীয় সুলতান
Reviewed by Khalilur Qaderi
on
October 29, 2018
Rating: