৮৬ বছর কেন বন্ধ ছিল আয়া সোফিয়া? আয়া সোফিয়ার মূল রহস্য (ভিডিও সহ)

শত শত বছরের ইতিহাস বহন করে আসা পৃথিবীর অন্যতম এক স্থাপনার নাম আয়া সোফিয়া। যা মধ্যযুগে রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল অর্থাৎ বর্তমান তুরষ্কের সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুলে অবস্থিত। এটি মূলত একটি গির্জা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ১ হাজার বছর আয়া সোফিয়া ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গীর্জা। এরপর এটি ৫০০ বছর মসজিদ হিসাবে ব্যাবহত হয়েচ্ছে। হাজার হাজার বছরের এই স্থাপনার সাথে মিশে আছে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন... আলোকিত দ্বীনের আজকের এই পর্বে আমরা জানবো তুরষ্কের ঐতিহাসিক এ স্থাপনা আয়া সোফিয়া সম্পর্কে।

Video


আয়া সোফিয়া একেক দেশে একেক নামে পরিচিত। এর অন্যান্য নামগুলো হলোঃ

আয়া সোফিয়া
হাজিয়া সোফিয়া
সাঙ্কটা সোফিয়া ইত্যাদি

আয়া সোফিয়া শব্দের অর্থ পবিত্র জ্ঞান। এ জ্ঞানের আধার হচ্ছে একটি বিশাল ভবন। যাকে কেন্দ্র করে চতুর্দিকে ঘুরানো প্রশস্ত বারান্দা আর উপরে বিশাল গম্বুজ। চারদিকে রয়েছে আরো অনেকগুলো ছোট ছোট গম্বুজ। বর্তমানে এর দৈর্ঘ্য ২৬৯ ফুট ও প্রস্হ ২৪০ ফুট এবং এর উচ্চতা ১৮০ ফুট। মসজিদ হিসাবে সংস্কারের পর আয়া সোফিয়ার বেশকিছু পরিবর্তন ঘটেছিল। সুউচ্চ মিনারগুলো তারমধ্যে অন্যতম। এই স্থাপনার ভেতরে বসানো হয় মেহরাব, মিম্বার ও নানা ধরনের জমকালো বাতি।

আয়া সোফিয়ার প্রধান আকর্ষন হল এর কেন্দ্রীয় গুম্বুজ। প্রধান এ গুম্বজের চারপাশে রয়েছে অনেকগুল জানালা। এই জানাগুলোর মাধ্যমে দিনের বেলায় আলো প্রবেশ করে এটাকে প্রাকৃতিকভাবে আলোকিত জরে তোলে। হালকা রোদে ঝকঝক করে দেয়ালের সোনালী রংয়ের মোজাইক, বিচিত্র কারুকাজ আর নানা চিত্রকর্ম। এই রোদ আর ছায়ার খেলা যেন একটা অদ্ভুত রহস্য জন্ম দেয়।

স্থাপনা হিসাবে দৃশ্যত এ ভবনটি যতটা সুন্দর তারচেয়ে বেশি গল্প ও রহস্যময় করে রেখেছে। বর্তমানে মসজিদ থাকলেও মূলত এটি সম্রাট জাষ্টিনিয়ানের সময়ে তৈরি একটি স্থাপনা ছিল। আয়া সোফিয়া যেখানে অবস্থিত এই যায়গায় ছিল রোমান পেগান ধর্মের একটি উপাসনালয়। ৩২৫ সালে রোমান সম্রাট প্রথম কনস্টান্টিন এখানে একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন। এরপর তার পুত্র ২য় কনস্টানটিয়াস ৩৬০ সাকে সেই মন্দিরকে আরো আরো সু-সজ্জিত করে তোলেন। ৪০৪ সালে এক দাঙ্গায় তখনকার কাঠের মন্দিরটি পুড়ে যায়। এরপর এ স্থানে কনস্ট্যান্টিনোস এবং ২য় থিয়োডোসিয়াস এখানে জমকালো এক উপসনালয় গড়ে তুলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং এ নির্মাণ কাজ শেষ হয় ৫৩৭ ক্ষিষ্টাব্দে। এরপর থেকে প্রায় ৯০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল এই আয়া সোফিয়া।

১৪৫৩ সালে উসমানিয় সাম্রাজ্যের তৎকালীন মুসলিম শাসক ফতেহ সুলতান মুহাম্মদ নিজ অর্থায়নে এটি ক্ষ্রিষ্টানদের থেকে ক্রয় করে নেন। এরপর সুলতান এ আয়া সোফিয়াকে একটি ওয়াকফ সম্পত্তিতে রূপান্তর করেন এবং নিজের নামে ফাউন্ডেশন গঠন করে তার ওপর আয়া সোফিয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। ১৪৫৩ সালের ১ জুনে এটিকে মুসলমানদের উপাসনালয় হিসাবে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। সুলতান প্রথমবারের মত জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মসজিদটি উদ্ভোদন করেন। এরপর দীর্ঘ ৪৮২ বছর এটি মসজিদ হিসেবেই সমহিমায় বিরাজ করছিল। ইস্তাম্বুলে ১৬১৬ সালে ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নির্মাণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আয়া সোফিয়াই ছিল তুরষ্কের প্রধান মসজিদ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য পরাজিত হয়। তখন বিজয়ী মিত্র শক্তিগুলো তাদের ভূখন্ডকে নানা ভাগে ভাগ করে ফেলে। তবে তুরষ্কে ওই সাম্রাজ্যের অবশেষ থেকেই জাতীয়তাবাদী তুর্কী শক্তির উত্থান হয়। তারা প্রতিষ্ঠা করে আধুনিক তুরস্ক। এরপর ১৯৩৫ সালে আবার মসজিদটিকে গীর্জায় রূপান্তরের দাবি উঠলেও ফতেহ সুলতান মুহাম্মদ যেহেতু নিজ অর্থায়নে এটি ক্ষ্রিষ্টানদের থেকে ক্রয় করেছিলেন তাই তাদের সেই দাবি ধোপে টেকেনি। কিন্তু তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ আতাতুর্কের সরকার ১৯৩৫ সালে ঐতিহাসিক এই মসজিদটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে দেয়। এরপর থেকে এটি তুরস্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়। জানা যায় ১৯৮৫ সালে জাদুঘর থাকা কালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইউনেস্কো।

এদিকে তুরস্কের ইসলামপস্থীরা বহুকাল ধরেই চাইছিলেন এটিকে আবার মসজিদে পরিণত করতে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলীয়রা এর বিরোধিতা করে আসছিল প্রথম থেকেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের দিক থেকে আয়া সোফিয়াকে আবার মসজিদে পরিণত করার সমালোচনা করা হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানও বেশ কিছুকাল আগে আয়া সোফিয়াকে আবার মসজিদে পরিণত করার কথা বলেন... ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এক নির্বাচনী সভায় এই পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান। এরদোয়ান বলেন, আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর বানানো মস্তবড় ভুল ছিল। এরদোয়ানের এ ঘোষণার বিরোধিতা করে আদালতে মামলা করে একটি বেসরকারি সংস্থা। 

সে মামলার শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই ২০২০ এ... তুরস্কের আদালত মামলা খারিজের পাশাপাশি আতার্তুক সরকারের সেই ডিক্রি বাতিল করেন। আদালত রায় দেন এটিকে মসজিদে ফিরিয়ে আনার পক্ষে। যার মাধ্যমে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি হয়। ওইদিন আয়া সোফিয়াকে মসজিদ রূপান্তরের পুন:ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। অবশেষে প্রায় ৮৬ বছর পর আয়া সোফিয়ায় নামাজ আদায়ের সুযোগ পায় মুসলমানরা।

গত ২৪ জুলাই ২০২০ রোজ শুক্রবার কয়েক হাজার মানুষের অংগ্রহণ জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে আবারো মসজিদে ফিরল এই ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া। মসজিদে মানুষ জায়গা না পেয়ে প্রাঙ্গণসহ আশপাশের রাস্তায় নামাজ আদায় করেন অনেক মুসল্লি। বর্তমানের করোনা সংক্রমণরোধে কঠোরভাবে মানা হয় সামাজিক দুরত্বসহ স্বাস্থবিধি। এই জামায়াতে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিজেও। নামাজের শুরুর আগে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এর আগে কুরআন তেলাওয়াত করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। প্রেসিডেন্ট তার সুমধুর কণ্ঠে তেলাওয়াত করেন সুরা ফাতেহা এবং সুরা বাকারার কিছু অংশ। পরিশেষে বলা যায় তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আধুনিক সুলতান রূপে আবার আয়া সোফিয়া মসজিদকে তার স্বমহিমায় নিয়ে গিয়ে তার পূর্বসুরির কলঙ্ক কিছুটা হলেও মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রিয় দর্শনক, আজ এ পর্যন্তই... আপনাদের কাছে ভিডিওটি ভালো অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না। পাশাপাশি আয়া সোফিয়া নিয়ে আরো অনজানা কোন তথ্য থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে তা আমাদের জানাতে পারেন। এ জাতীয় আরো ভিডিও দেখতে চাইলে আমাদের আয়োকিত দ্বীন চ্যানেলটি সাভস্ক্রাইভ করে রাখুন। পরবর্তীতে কি বিষয়ে ভিডিও দেখতে চান তাও জানাতে পারেন... ধন্যবাদ।
৮৬ বছর কেন বন্ধ ছিল আয়া সোফিয়া? আয়া সোফিয়ার মূল রহস্য (ভিডিও সহ) ৮৬ বছর কেন বন্ধ ছিল আয়া সোফিয়া? আয়া সোফিয়ার মূল রহস্য (ভিডিও সহ) Reviewed by dirilis news on July 28, 2020 Rating: 5
Powered by Blogger.