দিরিলিস রিভিউ : সিজন ২

দিরিলিস আর্তুগ্রুল সিজন ২ শেষ করলাম আজ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিপদ যেন পিছু ছাড়ছেই না। জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে। কিছু অনুভূতি প্রকাশ না করে পারছি না।



১. অযোগ্যদের হাতে ক্ষমতা গেলে নিজের এবং জাতির জন্য বিপদ ডেকে আনবেই। একজন সেনাপ্রধান ও গোষ্ঠী প্রধান হওয়ার কোন যোগ্যতাই তুপতেকীনের ছিল না। অথচ আর্তুগ্রুলের সাফল্যে হিংসায়, রাগে প্রতিটি পদক্ষেপে বিরোধীতা করে গেছে। তার না ছিল নিজ পরিবার কিংবা সেনাদের মধ্যে বেইমান চিহ্নিত করার মত বিচক্ষণতা। আর না ছিল কৌশল প্রণয়নের ক্ষমতা। সেজন্য কায়ী ও দোদুর্গা বসতির সেনাদের মধ্যে বার বার উত্তেজক পরিবেশ সৃষ্টি করে। যদিও শেষ দিকে তার বোধোদয় ঘটে। তুপতেকীন ও গোবজে হাতুনের করুন মৃত্যু (শহীদ) সত্যিই খারাপ লাগে। আর ওস্তাদ দেলিদেমিরের শহীদি মৃত্যু হৃদয় নাড়া দিয়ে যায়।
২. অতিরিক্ত রাগ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। গুন্দারো বীম নিঃসন্দেহে সাহসী সেনা। কিন্তু তার অদূরদর্শিতা ও মাত্রাতিরিক্ত রাগ আর্তুগ্রুলের পথকে বার বার বিপদসংকুল করে তোলে। তাই পূর্বে যেমন করতুঘলু আর এখন গুমুস্তেকীন, সাদেত্তীন কোপেকের মত শয়তানের ফাঁদে অতি সহজেই পা দিয়েছেন।
৩. সিজন ২ এর একটি চমক ছিল সুঙ্গুর তেকীন। প্রথমে ভেবেছিলাম যার জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে শত্রুর ডেরায় গুপ্তচরবৃত্তি করে নিশ্চই সে বিচক্ষণ হবে এবং আর্তুগ্রুলের একজন সেরা সঙ্গী হবে। কিন্তু তিনিও গুন্দারোর পথ ধরেন। যা অত্যন্ত হতাশ করেছে।
৪. মোনাফেক হিসেবে গুমুস্তেকীন এবং সাদেত্তীন কোপেকের অভিনয় ছিল নজর কাড়া। এদের দেখি আর ভাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইরা কতটা ভয়াবহ ছিল! আয়াতুলুন, গঞ্জাগুল এর মত নারীরা সত্যিই শয়তানের চেয়েও ভয়ংকর।

৫. একজন মা হিসেবে, গোষ্ঠির প্রধান হিসেবে চরম সংকটের সময় হাইমে হাতুনের ভূমিকা ও অভিনয় ছিল প্রশংসনীয়। হালিমা, গোবজের অভিনয় শুরুতে নড়বড়ে মনে হলেও শেষ দিকে ভালো করেছে।
৬. শত্রু হিসেবে বাইজু নয়ান ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। তার লক্ষ ছিল অবিচল এবং কৌশল ছিল সুনিপুণ। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত হাল ছাড়েনি। যদিও আর্তুগ্রুলের হাত থেকে শেষ রক্ষা হয়নি।
৭. সত্যের পথে অবিচল থাকতে গিয়ে যখন চরম সংকট চলে আসে তখন বিশ্বস্ত কিছু সহযোদ্ধা পথ হারায়। এর বহু উদাহরণ আছে। হামজা ঠিক সেই সময় নিজেকে বিশ্বাস করতে না পেরে ভুল করে বসে। আপনজন তখন দ্বিধায় পরে যায় "আমরা কি সত্যের পথে আছি"। তাহলে আমাদের এত দুর্যোগ কেন? শায়েখ ইবনুল আরাবী তখন আর্তুগ্রুলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন "সত্যের পথে চলতে গিয়ে পুরো পৃথিবী যদি তোমার পাশে না-ও থাকে মনে রেখো আল্লাহ তোমার সাথে আছেন।"
৮. রাষ্ট্র, গোষ্ঠী বা কোন জনপদের নেতা নির্বাচনে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী যে কলকাঠি নেড়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার কৌশল চালিয়ে যায় সেটা মনেহয় এখান থেকেই শুরু হয়। আর তাদের কৌশল ও টাকার খেলায় আর্তুক বে, আর্তুগ্রুল বীমের মত সৎ নির্ভীক মানুষ গুলোর পরাজয় দেখতে খুবই খারাপ লাগছিল। গুন্দারো বীমের এমন ভূমিকা লজ্জাস্কর ছিল।
কিন্তু সত্যের পথে অবিচল থাকতে গেলে গুটি কয়েক সত্যের সেনানী ব্যতিত পুরো পৃথিবী তার বিপক্ষে চলে যায়। এমনকি নিজ পরিবার, স্বজন, গোষ্ঠী, রাষ্ট্র সকলেই। তাইতো পুরো সিজন জুড়ে আর্তুগ্রুলকে প্রতারক, একঘেয়ে, জেদি ও বিপদের বাহক হিসেবে অপবাদ সইতে হয়েছে। সেইসব দিন গুলো তার জন্য ছিল চরম হতাশার। কিন্তু আর্তুগ্রুল ছিল তার লক্ষে অবিচল। তার কথা ছিল "সত্য উদঘাটনে যদি পুরো পৃথিবীকে বিরক্ত করতে হয় তবে আমি তাই করবো।" অন্যদিকে তারগুত, বামসি, দোগানের মত তিনজন বিশ্বস্ত সেনা থাকলে আর ওস্তাদ দেলিদেমির, আর্তুক বে, শায়েখ ইবনুল আরাবীর মত অভিভাবক থাকলে যেন পুরো পৃথিবী জয় করা যায়। হালিমার মত জীবন সঙ্গিনী যেকোন পুরুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পরম পাওয়া এবং অনুপ্রেরণা। জঙ্গলের সেই পাগলা সেনাটার কথা না বললে অকৃতজ্ঞতা হয়ে যায়।

৯. এবার আসি মহানায়কের ভূমিকা নিয়ে। আর্তুগ্রুল তার অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ, অসাধারণ সেনা নৈপুণ্য, ইসলাম ও মানবতার জন্য অবিচল মনোবাসনায় এবং আল্লাহর রহমতে মুসলিম বিশ্বের কাছে বিশ্বস্ত নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। এবং তার হাতেই তুর্কি স্বাধীন সাম্রাজ্যের পতাকা তুলে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা।

১০. দ্বিতীয় সিজনে সবচেয়ে টুইস্ট ছিল ছোট্ট তুরালা। ও আসলেই একটা বিচ্ছু। সেলচানের ভূমিকা ছিল খুবই চমৎকার। বামসির বুড়ো বয়সে মক্তবে যাওয়ার দৃশ্য ভালোই লাগছে।
জানিনা সিজন ৩ কেমন হবে। কি অপেক্ষা করছে আর্তুগ্রুল বীমের স্বপ্ন যাত্রায়...



লিখেছেন: ‍মিসবাহ উদ্দীন


দিরিলিস রিভিউ : সিজন ২ দিরিলিস রিভিউ : সিজন ২ Reviewed by Tottho Projukti on April 18, 2020 Rating: 5
Powered by Blogger.