ইসলামে তুর্কি ইতিহাস এবং বর্তমান ইসলামী বিশ্বে এরদােগানের অবদান

ইদানীং দেখতেছি এরদোগানের ব্যাপরে যেমন তেমন কথা বলা হচ্ছে তাদের জন্য এই লেখাটি। 
-হাবিবুর রহমান

ইসলামের স্বর্ণযুগ

প্রথম কথা:

তুরস্ক ইসলামের ইতিহাস ও তুর্কীরা মুসলমানদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একাধিক ছহীহ হাদীছ মতে নবী নূহের তিনটি ছেলে ছিল। সাম, হাম ও ইয়াফেছ [মুনসদে আহমদ (২০১২৬)]। সামের অধঃস্তন পুরুষ আরব উপদ্বীপ ও ইরাক-শামের আরবেরা। হামের অধঃস্তন পুরুষ পূর্ব আফ্রিকার হাবশী, পশ্চিম আফ্রিকার বর্বর ও মিসরের কিবতীরা। ইয়াফেছের বংশধর ইয়াজুজ-মাজুজ, রোমান, তুর্ক ও সাইপ্রেরীরা [ইবনে আসাকিরের তারীখে দিমাশকে (২৬/২৭৮) ইঙ্গিত পাওয়া যায়]। হাদীছ শরীফে রোমান ও তুর্কীদের সাথে আরব মুসলমানদের যুদ্ধের কথা বর্ণিত হয়েছে। কোনো হাদীছে রোমানদের কথা ও কোনো হাদীছে তুর্কীদের কথা এসেছে। সম্ভবত রোমান বলতে পশ্চিম ও দক্ষিণ ইউরোপের মানুষকেই বুঝানো হয়। তুর্কী বলতে পূর্ব ইউরোপ, ককেশাস ও মোঙ্গল-চীনের লোকদেরকে বুঝানো হয়। খ্রীষ্টান রোমানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সবসময় ক্রুসেডসহ বিভিন্ন যুদ্ধ করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। অনুরূপ চেঙ্গিস ও হালাকু খানের নেতৃত্বে তুর্কীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে খোরাসান ও বাগদাদে। পরে চেঙ্গিসের বংশধরসহ তুর্কীদের একটি বিশাল অংশ ইসলাম গ্রহণ করে। তবে তাদের রক্ত-মাংস থেকে যুদ্ধ ও দেশ দখল-শাসনের নেশা কখনো দূর হয়নি। ফলে তারা তুরস্ক, ইরান ও আফগানসহ মধ্য এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশে শত শত বছর মুসলিম জনগোষ্ঠীগুলোকে শাসন করতে সক্ষম হয়। ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিসহ সিহাহ সিত্তার হাদীছে রোমান ও তুর্কীদের অবয়বের যে বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে, তাহলোঃ তারা লাল বর্ণের চেহারা, চ্যাপ্টা মুখ ও ছোট চোখওয়ালা হবে এবং তারা পশমের জুতা পরবে। অন্য হাদীছে ইয়াজুজ-মাজুজের বৈশিষ্ট্যও এরকম বলে বর্ণিত হয়েছে। কিছু হাদীছে ‘রোমান’ ﺍﻟﺮﻭﻡ ও ‘তুর্কী’ ﺍﻟﺘﺮﻙ এর পরিবর্তে তাদের ক্ষেত্রে ‘বনু কনতুরা’ ﺑﻨﻮ ﻗﻨﻄﻮﺭﺍﺀ , ‘বনুল আছফার’ ﺑﻨﻮ ﺍﻷﺻﻔﺮ , ‘করমান’ ﻛﺮﻣﺎﻥ , ‘খোজা’ ﺧﻮﺯﺍ ইত্যাদি শব্দ এসেছে। আমার মনে হচ্ছে, পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া ও চীন প্রভৃতির লোকেরা ইয়াফেছের বংশধর রোমান তথা তুর্কী ও সাইপেরীদের মিশ্রণ। আর আমারা ভারত উপমহাদেশের লোকেরা সাম, হাম ও ইয়াফেছ তিনজনের বংশধরের মিশ্রণ। তুর্কীদের একটি শাখা হলো কুর্দী। যাইহোক, হাদীছ শরীফে ফারেসী (ইরান ও তার আশ-পাশের অঞ্চলের মানুষ) ও আজমীদের ইসলামগ্রহণের কথা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম বোখারী ও ইমাম গাজালী থেকে শুরু করে ইসলামের বড় বড় ফকীহ, মুহাদ্দিছ ও র্দাশনিকের ৯৫% এর জন্ম ফারেসে।

ফারেসের অনারবেরা ইসলামের তাত্ত্বিক সেবার জন্য নির্বাচিত হলেও এর পার্শ্ববর্তী তুর্কী ও কুর্দীরা ইসলামের পক্ষে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। নূরুদ্দীন জঙ্গী ও ছালাহুদ্দীন আয়ুবী কুর্দী এবং ইস্তাম্বুল বিজেতা মুহাম্মদ আল-ফাতেহস পুরো উছমানী বংশ ছিলেন তুর্কী। অনরাবদের ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে অনেক হাদীছ আছে। তন্মধ্যে দুইটি হাদীছ নিম্নরূপঃ
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ، ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ‏« ﺭﺃﻳﺖ ﻏﻨﻤﺎ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺳﻮﺩﺍﺀ ﺩﺧﻠﺖ ﻓﻴﻬﺎ ﻏﻨﻢ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺑﻴﺾ ‏» ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﻤﺎ ﺃﻭﻟﺘﻪ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ‏« ﺍﻟﻌﺠﻢ ﻓﻴﺸﺎﺭﻛﻮﻧﻜﻢ ﻓﻰ ﺩﻳﻨﻜﻢ ﻭﺃﻧﺴﺎﺑﻜﻢ ﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻣﻌﻠﻘﺎ ﺑﺎﻟﺜﺮﻳﺎ ﻟﻨﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺠﻢ ‏» . ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ‏( 4/437 ، ﺭﻗﻢ 8194 ‏) ﻭﻗﺎﻝ : ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ


অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ বলেছেন, “স্বপ্নে আমি অনেক কালো ছাগল দেখলাম। তাদের মাঝে অনেক সাদা ছাগলও প্রবেশ করলো।” উপস্থিত ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ আপনি এটির কি তাবীর করেছেন? বললেন, “আজমীরা। তারা তোমাদের সাথে ও দীন ও আত্মীয়তায় অংশীদার হবে। ঈমান যদি ছুরাইয়াতেও (কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জ) ঝুলানো থাকে, তাহলে আজমের কিছু লোক তা পাবেই।” [মুস্তাদরকে হাকেম (৮১৯৪)]


হযরত কয়েস বিন সাদ থেকে আরেকটি হাদীছে এসেছেঃ
« ﻟَﻮ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ ﻣُﻌَﻠَّﻘًﺎ ﺑِﺎﻟﺜُّﺮَﻳَّﺎ ﻟَﻨَـﺎﻟَﻪُ ﺭِﺟَﺎﻝٌ ﻣِﻦْ ﻓَﺎﺭِﺱٍ ‏» . ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ‏( 18/353 ، ﺭﻗﻢ 900 ‏) ، ﻭﺃﺑﻮ ﻳﻌﻠﻰ ‏( 3/23 ، ﺭﻗﻢ 1433 ‏) ﻋﻦ ﻗﻴﺲ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻰ ‏( 10/65 ‏) : ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﻳﻌﻠﻰ ﻭﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻰ ﻭﺭﺟﺎﻟﻬﻢ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ .

অর্থঃ “ঈমান যদি ছুরাইয়াতেও (কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জ) ঝুলানো থাকে, তাহলে ফারেসের কিছু লোক তা পাবেই।” [মুসনদে আবু ইয়ালা (১৪৩৩) ও মুজমে তবরানী কবীর (১৮/৩৫৩)]

তুর্কীদের সংরক্ষণ ক্ষমতা প্রসঙ্গে খতীবে বাগদাদী কৃপণদের বিরুদ্ধে রচিত তাঁর কিতাব ‘আল-বুখালা’তে মুহাম্মদ বিন মুসলিম থেকে বর্ণিত নীচের হাদীছটি এনেছেনঃ
« ﻗُﺴﻢ ﺍﻟﺤﻔﻆ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺟﺰﺍﺀ ﻓﺘﺴﻌﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﺘﺮﻙ ﻭﺟﺰﺀ ﻓﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻗﺴﻢ ﺍﻟﺒﺨﻞ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺟﺰﺍﺀ ﻓﺘﺴﻌﺔ ﻓﻰ ﻓﺎﺭﺱ ﻭﺟﺰﺀ ﻓﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻗﺴﻢ ﺍﻟﺴﺨﺎﺀ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺟﺰﺍﺀ ﻓﺘﺴﻌﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﺴﻮﺩﺍﻥ ﻭﺟﺰﺀ ﻓﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻗﺴﻢ ﺍﻟﺤﻴﺎﺀ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺟﺰﺍﺀ ﻓﺘﺴﻌﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﻭﺟﺰﺀ ﻓﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻗﺴﻢ ﺍﻟﻜﺒﺮ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺟﺰﺍﺀ ﻓﺘﺴﻌﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﺮﻭﻡ ﻭﻭﺍﺣﺪ ﻓﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻨﺎﺱ ‏» . ﻭﻟﻪ ﺷﺎﻫﺪ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺃﻧﺲ : ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺪﻳﻠﻤﻰ ‏( 2/37 ، ﺭﻗﻢ 2229 ) .

অর্থঃ “সংরক্ষণ ক্ষমতাকে দশভাগ করে নয়ভাগ তুর্কীদের মাঝে ও একভাগ বাকী সকল মানুষের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কৃপণতাকে দশভাগ করে নয়ভাগ ফারেসীদের মাঝে ও একভাগ বাকী সকল মানুষের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। দানশীলতাকে দশভাগ করে নয়ভাগ সুদানের (কালো লোক) মাঝে ও একভাগ বাকী সকল মানুষের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। লজ্জাশীলতাকে দশভাগ করে নয়ভাগ আরবদের মাঝে ও একভাগ বাকী সকল মানুষের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। অহঙ্কারকে দশভাগ করে নয়ভাগ রোমানদের মাঝে ও একভাগ বাকী সকল মানুষের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।” [দাইলামীর মুসনদুল ফিরদাউসে (২২২৯) একই মর্মের হাদীছ হযরত আনাস থেকেও বর্ণিত হয়েছে]।


দ্বিতীয় কথা:
একজন তুর্কী মুসলিম যোদ্ধা গাজী উছমান বিন উরতুগরুল ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺃﺭﻃﻐﺮﻝ ১২৯৯ খ্রীষ্টাব্দে বর্তমান তুরস্কের সোগুত শহরে তুর্কী ইসলামী সলতনতের গোড়াপত্তন করেন। পরে তার অধঃস্তন পুরুষেরা খ্রীষ্টান রোমানদের সাথে যুদ্ধ করে বিশাল উছমানী ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১৩৩৫ সালে তাঁর অধস্তন পুরুষ সুলতান উর খান সোগুত ছেড়ে সাম্রাজ্যের রাজধানী মারমারা সাগরের নিকটবর্তী বিজিত 'বুরসা' শহরে স্থানান্তর করেন। এরপর ১৩৬৩ সালে সুলতান প্রথম মুরাদ সেটির রাজধানী আরেক বিজিত শহর এদর্নে স্থানান্তরিত করেন। এরপর সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের ছেলে দ্বিতীয় মুহাম্মদ (আল-ফাতেহ) নবীজি ছঃ এর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যায়ন করতে ১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে # রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক রাজধানী 'কনস্টিটিউপল' বিজয় করেন এবং উছমানী সলতনতের রাজধানী তাতে স্থানান্তরিত করেন। তিনি সেটির নাম পরিবর্তন করে ইসলামবুল ﺇﺳﻼﻣﺒﻮﻝ রাখেন (পরবর্তীতে সেটি আস্তানা ও ইস্তম্বুল নামে পরিচিত হয়)। উসমানী Ottoman সুলতানরা ষষ্ঠদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সুলাইমান কানুনীর আমলে সার্বিয়া ও বসনিয়াসহ গোটা পূর্ব ইউরোপ খ্রীষ্টানদের কাছ থেকে দখল করে নেন। এমনকি সুলতান সুলাইমান কানুনীর নেতৃত্বে তারা মধ্য ইউরোপের হাঙ্গেরীও দখল করেন এবং ভিয়েনা (বর্তমান অষ্ট্রিয়ার রাজধানী) অবরোধ করেন। কিন্তু পূর্বদিকে ইরান-ইরাক দখলকারী  শিয়া ছাফাভীদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য তিনি অষ্ট্রিয়ার রাজার সাথে সন্ধি করে চলে আসেন এবং ইরাককে শিয়াদের দখল থেকে মুক্ত করেন। তো ১২৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে উছমানী ইসলামী সালতানাত ১৯২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৬২৫ সৌর বছর পর্যন্ত টিকে ছিল। এ সময় ক্ষমতা নিয়ে তাদের মাঝে গৃহবিবাদ হলেও ইউরোপের দাম্ভিক খ্রীষ্টানদেরকে তারা সুখে থাকতে দেয়নি। লাল চামড়ার দাম্ভিকেরা উছমানীদেরকে শতশত বছর জিযিয়া দিয়েই তাদের অধীনে পূর্ব ইউরোপে বসবাস করছিল। তবে দূরে অবস্থিত হওয়ায় উছমীনীরা মুসলিম স্পেন যেমন দখল করতে পারেনি, তেমনি সেটিকে রক্ষার জন্য এগিয়েও যেতে পারেনি। বসনিয়া হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া ও কসোভো নামের পূর্ব ইউরোপের তিনটি স্বাধীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ উছমানীদেরই অবদান।

উছমানীদেরকে সবচেয়ে বেশী জ্বালিয়েছিল বৃটেন। বৃটেন নামের ইবলীসদের রাজ্যটি। উনবিংশ শতাব্দীতে তারা উছমানী সলতনতের পতন ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ওই সময় তুর্কী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ খান পশ্চিমাদের উন্নতি দেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের অনুকরণ করতে শুরু করে। তুর্কীদের বিরুদ্ধে বৃটেন কাজে লাগায় আরব খ্রীষ্টান ও মুসলিম জাতিয়তাবাদীদেরকে। তারা তুর্কীদের শাসন থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করে। একই ভাবে তুর্কী জাতিয়তাবাদীদেরকেও আরবদের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়। বিশেষত পশ্চিমা স্টাইলে ঢেলে সাজানো সেনাবাহিনীর মধ্যে বস্তুবাদী উন্নয়ন ও জাতিয়তাবাদের বীজ বপন করা হয়। এক পর্যায়ে সুলতান প্রথম আবদুল মজীদ ও তাঁর ভাই প্রথম আবদুল আযীযের আমলে উছমানী সলতনত খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। একদিকে শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা, আরেকদিকে সেনাবাহিনীসহ সবক্ষেত্রে তুর্কী জাতিয়তাবাদীদের দাপট, আরেকদিকে পূর্ব ইউরোপের সাথে বিরোধ এবং আরেকদিকে আরব দুনিয়ায় বিদ্রোহ ও দাঙ্গা। পরে ১৮৮৬ সালে ধার্মিক ও বুদ্ধিমান সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামীদ এসেও অবস্থার তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। তিনি সলতনকে রক্ষায় অনেক শক্ত অবস্থান নিয়েও বৃটিশ ইবলিস ও তাদের স্থানীয় মিত্র সেক্যুলার জাতিয়তাবাদী সেনা কর্মকতাদের সামনে টিকে থাকতে পারেননি। ১৯০৯ সালে তারা তাঁকে গৃহবন্দী করে তার ভাই পঞ্চম মুহাম্মদকে পদে বসায়। পরে তিনি গৃহবন্দী অবস্থায় ১৯১৮ সালে ইন্তেকাল করেন। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামীদের আমলে ফিলিস্তীনে জায়োনিস্টদের আগমন শুরু হয়। সুলতান আবদুল হামীদের কাছে গিয়ে জায়োনিস্টরা ফিলিস্তীনে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ চাইলে তিনি সরাসরি না করে দেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়ে জায়োনিস্টরা সেখানে জায়গা কেনা শুরু করে। ১৯১৩ সালে প্যারিসে আরব জাতিয়তাবাদী ও তুর্কী জাতিয়তাবাদীদের মধ্যে এ মর্মে চুক্তি হয় যে, আরবরা তুর্কী সলতনত থেকে স্বাধীন হবে না। তবে স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করবে। কিন্তু পরের বছর সার্বিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে অষ্ট্রিয়ার যুবরাজ নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে স্বীয় স্বার্থ বিবেচনা করে উছমানীরা জার্মান, অষ্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী ও বুলগেরিয়ার পক্ষ নেয়। ওই যুদ্ধে তারা কেন্দ্রীয় শক্তি নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালী, রুমানিয়া, সার্বিয়া রাশিয়া ও জাপান সকলে ছিল আরেক পক্ষে (তাদেরকে মিত্রশক্তি বলা হয়)। যুদ্ধে জার্মান ও উছমানীরা পরাজয় বরণ করে। যুদ্ধকালীন সময়ে বৃটিশ ইবলীসরা উছমানীদের সময় শেষ ঘোষণা দিয়ে # মক্কার গভর্ণর শরীফ হুসাইনসহ সকল আরব নেতাদেরকে উছমানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে তারা ১৯১৬ সালে উছমানীদের বিরুদ্ধে মহা বিদ্রোহ করে। পরে বৃটিশ ইবলীসরা শরীফ হুসাইনের 'আরব খেলাফত'র স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে নজদের তাঁবেদার বাদশা আবদুল আযীযকে হেজায দখলের জন্য সবুজ সংকেত দেয়৷ ফলে আবদুল আযীয তার মিত্র ওয়াহাবী সালাফীদের সাথে নিয়ে ১৯২৫ সালে মক্কা দখল করে নেয়৷ সে আরেক দীর্ঘ ইতিহাস৷

উসমানীয় সুলতান পঞ্চম মুহাম্মদ ১৯১৮ সালের জুলাইয়ে মারা যান। পরে তার ভাই ষষ্ঠ মুহাম্মদ ওয়াহীদুদ্দীন খান পদে বসেন। তিনি ওই ১৯১৮ সালে অক্টোবরে উছমানীরা মিত্রশক্তির প্রধান বৃটেনের সাথে গ্রিসে লজ্জাজনক মুডরোস যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে তুরস্ক ছাড়া বাকী সকল স্থান থেকে দাবি ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর ফ্রান্স ও বৃটেন মিলে সাইস-বেকো গোপন চুক্তির মাধ্যমে নিকটস্থ আরব দেশগুলোকে ভাগ করে নেয়। বৃটেন দখল নেয় মিসর, ফিলিস্তীন, ইরাক, কুয়েত, ইয়েমেন, ওমান, আমিরাত ও কাতার। আর ফ্রান্স দখল করে নেয় সিরিয়া, লেবাবন। পরের মাসে অষ্ট্রো হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের সাথে ইটালীর  ভিলাগস্টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আর এতে করে ভয়ঙ্কর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিস্তেজ হয়ে যায়। এ যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ৯০ লক্ষ সৈন্য ও ৫০ লক্ষ জনসাধারণ নিহত হয়। আহত হয় আরো বেশী। এ যুদ্ধের ফলাফলে উছমানী সাম্রাজ্য ভেঙ্গে তুরস্ক, রুশ সাম্রাজ্য ভেঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে গণতন্ত্র বান্ধব জার্মান ও অষ্ট্রো হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য ভেঙ্গে গণতন্ত্র বান্ধব অষ্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরীর সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ শেষ হবার পর বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালী ও মার্কিন নৌবাহিনী উছমানী সাম্রাজ্যের রাজধানী ইস্তম্বুলসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে সৈন্য প্রবেশ করায়। এতে উসমানীয়দের সেক্যুলার জাতিয়তাবাদী সেনা কর্মকর্তা  মোস্তফা কামাল তুর্কী জাতিয়তাবাদী জাগরণের ডাক দেয় এবং গ্রিসের সাথে যুদ্ধ করে মিত্রশক্তি সাথে লজ্জাজনক লুজান চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ক থেকে বাইরের সেনাদের প্রত্যাহার ও ইস্তাম্বুলসহ উসমানীয় আমলের পুরো তুর্কী অঞ্চলে একটি জাতিয়তাবাদী সেক্যুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। বৃটেন ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমারা মোস্তফা কামালের কঠোর সেক্যুলার চিন্তা ও কর্ম দেখে এতে বাধ সাধা থেকে বিরত থাকে। এর ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।

মোস্তফা কামালের উত্থান হলে ক্ষমতাহীন সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ ওয়াহীদুদ্দীন খান ১৯২২ সালের অক্টোবরে মাল্টায় চলে যান। পরে তাঁর ক্ষমতাহীন পদে বসেন দ্বিতীয় আবদুল মজীদ। পরে বৃটিশ ইবলীসদের সাথে মোস্তফা কামালের লুজান চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সে ১৯২৪ সালে তুর্কী ইসলামী সলতনতের (খেলাফত) আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘোষণা করে, আবদুল মজীদসহ সুলতান পরিবারের সদস্যদের তুরস্ক থেকে বাইরে (ফ্রান্সে) চলে যেতে বাধ্য করে, তাদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এবং তুরস্ককে একটি সেক্যুলার স্টেট বলে ঘোষণা করে। বৃটিশ ইবলিসরা মোস্তফা কামালের নেতৃত্বাধীন তুরস্ককে স্বীকৃতি দেয় এবং সুসম্পর্ক তৈরি করে। এতে বেঈমান কামাল আনন্দিত হয়ে বৃটিশ ইবলীসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তুরস্ক থেকে ইসলাম ও উছমানীদের নির্দশন মুছে ফেলতে শুরু করে। সে আরবীতে আযান দেওয়া নিষিদ্ধ করে, আরবী অক্ষর দিয়ে লিখিত হয়ে আসা তুর্কী ভাষাকে ল্যাটিন বর্ণে লিখতে বাধ্য করে, শিশুদের জন্য ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ করে, রাজনীতিকদের জন্য প্রকাশ্য ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে, হজ নিষিদ্ধ করে, সরকারী প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য মাথায় কাপড় দেওয়া নিষিদ্ধ করে এবং আয়া ছুফিয়া নামের ইস্তম্বুলের সুন্দরতম মসজিদটিক জাদুঘরে রুপান্তর করে। কারণ, উছমানীদের ইস্তম্বুল জয়ের আগে এটি নাকি খ্রীষ্টানদের গীর্জা ছিল। চারিত্রিক দিক থেকে মোস্তফা কামাল নারী ও মদে আসক্ত ছিল। ১৯৩৭ সালে সে লিভারের যন্ত্রনাদায়ক 'সিরোসিস' রোগে আক্রান্ত হয়। ইউরোপের সেরা ডাক্তারদের ওষুধেও সে সুস্থ হতে পারেনি। ১৯৩৮ সালের নভেম্বরে সে তার পাপের পার্থিব লঘু শাস্তি ভোগ করে জাহান্নামের পথে রওনা হয়। শহীদ আবদুল্লাহ আযযামের ভাষায় “তুরস্কের লোকেরা হজ্ব করার অনুমতি পায় ১৯৪৬ এর পর। অর্থাৎ, এক সময় মুসলমান থাকা তুর্কীদের অন্তরে ইসলামী অনুভূতি আছে কিনা তা আমেরিকা পরীক্ষা করে দেখার পর।”

তৃতীয় কথা:
মোস্তফা কামালদের ইরতিদাদ সত্ত্বেও তুরস্কের মুসলমানরা ইসলামকে অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত হেফাজত করেছে। তারা তাদের শিশুদেরকে কোরআন শেখাতো লুকিয়ে ও গোপনে। আজ অনেক পরীক্ষা ও কষ্টের পর তুরস্কের মানুষেরা ইসলাম নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সক্ষম হচ্ছে। মুরতাদ তুর্কীদের পাশাপাশি তুরস্কের মুসলিম রাজনীতিকরা আজ প্রকাশ্যে নামাজ পড়ছে, শিশুরা কোরআন শিখছে, মহিলারা সরকারী প্রতিষ্ঠানে হেজাব করে কাজ করতে পারছে। তুরস্ক ইসলাম ও মুসলমানদের সেবায় বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। এসব সম্ভব হচ্ছে তুরস্কের ইসলামী ভাবধারার ‘জাষ্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’র কল্যাণে। এটির প্রধান প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়েব এরদোগানের জন্ম ১৯৫৪ সালে। তিনি মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে তিনি মরহুম নাজমুদ্দীন আরবাকানের ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টিতে যোগ দেন। পরে ১৯৮০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ হয়। ১৯৮৩ সালে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে মরহুম আরবাকান ‘আর-রিফাহ পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে এটির পক্ষ থেকে ইস্তম্বুলের মেয়র পদে নমিনেশন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন রিসেপ তাইয়েব এরদোগান।

১৯৯৮ সালে রিসেপ তাইয়েব এরদোগান ইস্তম্বুলের একটি মসজিদে বক্তব্য দেওয়ার সময় ‘মসজিদগুলো আমাদের অস্ত্রাগার এবং মুছল্লীরা আমাদের সৈন্য’ মর্মের একটি কবিতার লাইন বলার কারণে তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানি সৃষ্টির অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। এতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ‘আর-রিফাহ পার্টি’ পর্যাপ্ত ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন মরহুম আরবাকান। কিন্তু সেক্যুলার সেনাবাহিনী ১৯৯৮ সালে তার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে গ্রেপ্তার ও তাঁর দলকে আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে। মরহুম আরবকানের অনুসারীরা ১৯৯৮ সালে ‘ভার্চু পাটি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ সালে এটিকেও নিষিদ্ধ করা হয়। পরে আরবাকানের শিষ্য রজব তৈয়েব এরদোগান ও আবদুল্লাহ গুল মিলে ২০০১ সালে ‘জাষ্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালের নির্বাচনে দলটি বিপুল আসনে বিজয়ী হয়। এরদোগান তখন দন্ডিত হওয়ায় দলটির গঠন করা সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন তাঁর সহকর্মী আবদুল্লাহ গুল। পরে তিনি এরদোগানের দন্ড মওকুফের ব্যবস্থা নিলে ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন। সে থেকে তাঁর দল বারবার বিজয়ী হয়।

২০১৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্টের পদকে শক্তিশালী করে প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রেসিডেন্টের পদে চলে আসেন এবং ওই পদে বহাল আছেন। অন্যদিকে এরদোগানের রাজনৈতিক গুরু মরহুম আরবাকান ২০০৩ সালে ‘সায়াদত পার্টি’ গঠন করেন। তবে সেক্যুলাররা 'আর-রিফাহ পার্টি' পরিচালনায় তিনি দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এতে তাঁর জেল হয়। জেলে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে ২০০৮ সালে শিষ্য প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল তাঁর দন্ড মওকূফ করে তাঁকে মুক্ত করেন। পরে ২০১১ সালে এ মহান ব্যক্তি ৮৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ইদানীং আমি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা এবং সমাজ ও বিশ্ব বাস্তবতা উপলব্ধির অভাবে আমার কিছু জিহাদী ভাই-ভাতিজা তুরস্কের মুসলিম প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান কে কাফির ও মুরতাদ ফতোয়া দিচ্ছে। তারা তাকে কাফির প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন তথ্য ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে একটি ডকুমেন্টারীও তৈরি করেছে।

হ্যা! আমার এসব জিহাদী ভাই-ভাতিজাদের ক্ষোভ, আবেগ ও ব্যথার জায়গাটি আমি চিনি ও উপলব্ধি করি। কারণ, আমি তাদের মারহালাটা পার হয়েই এ অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু বাস্তবতা অনেক বড় কঠিন। ৮০ বছর ধরে চেপে বসা কঠোর সেক্যুলার সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে তুরস্ককে 'ইসলামী সংবিধান' উপহার দেবার পর্যায়ে এরদোগানের দল এখনো পৌঁছেনি এবং পৌঁছার সম্ভাবনাও আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, তারা তুরস্ককে শুধুমাত্র কঠোর সেক্যুলারিজম থেকে উদার সেক্যুলারিজমে নিয়ে আসাতেই ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের সকল ইসলাম বিরোধী শক্তি তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওরা যদি এখন তুরস্কে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে তাদেরকে তালেবান ও আলকায়েদার নেতাদের মত হয়তো বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকতে হবে নতুবা মিসরের ইখওয়ান নেতা ডঃ মুরসী ও ডঃ বদীর মত মৃত্যুদন্ড বা আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। তখন পশ্চিমারা তুরস্কে আরেক মোস্তফা কামালকে ক্ষমতায় বসাবে। নিশ্চয় আপনারা তা কখনো চাইবেন না। আর তুরস্কের মুসলমানরা আফগান তালেবানের মত যুদ্ধ সংস্কৃতি ধারণ করে বেড়ে উঠেনি এবং সেখানের পরিস্থিতিও এ মুহূর্তে তালেবান স্টাইলের যুদ্ধের জন্য অনুকূল নয়। তো প্রিয়  জিহাদী ভাইয়েরা আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দুর্বলতা ও অক্ষমতাগুলোর সাথে তার ইসলাম ও মুসলমানের পক্ষে যে সামান্য অবদান আছে, সেটি বিবেচনা করে তাঁকে কাফির ও মুরতাদ বানানোর চেষ্টা করা থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। সর্বোচ্চ তাঁর ঈমান নিয়ে আপনারা সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু বিদ্বেষ নিয়ে তাঁকে 'কাফির' বলে গ্যারান্টি দিতে পারেন না। মহান প্রভু আমাদেরকে ছহীহ ও পরিপক্ক বুঝ দান করুন৷

সকলে ্এই ইতিহাসটি শেয়ার করেন যেন সকলে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। মুসলিমদের ইতিহাস সংরক্ষণ করা মুসলিম হিসাবে আপনার উপর ফরজ। (দিরিলিস বাংলা ব্লগ)

আরো পড়ুন: https://dirilisbangla.blogspot.com/2018/12/blog-post.html
ইসলামে তুর্কি ইতিহাস এবং বর্তমান ইসলামী বিশ্বে এরদােগানের অবদান ইসলামে তুর্কি ইতিহাস এবং বর্তমান ইসলামী বিশ্বে এরদােগানের অবদান Reviewed by Tottho Projukti on April 30, 2020 Rating: 5
Powered by Blogger.