ছদ্মবেশে যে ওসমানীয় সুলতান বাইতুল্লাহর মেহমান!

তখন উসমানি সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ (১৮৭৬-১৯০৯)-এর খিলাফতকাল। জিলহাজ মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। জীবনে একবারের জন্যে হলেও বাইতুল্লাহর মেহমান হওয়ার জন্য সুলতানের মন আনচান করছে। কিন্তু চতুর্দিকে গাদ্দার ও শত্রুর দল। মরণোন্মুখ উসমানি খিলাফতের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগেই যেন তারা জ্যান্ত কবর দিতে প্রস্তুত! এ অবস্থায় খিলাফতের মসনদ অরক্ষিত রেখে তিনি হজে যাবেনই বা কিভাবে!


সংগ্রহিত

লোকটি মক্কা-মদিনায় হাজিদের দিকনির্দেশনার কাজ করে। আগত হজযাত্রীদের জন্য রাহবারির কাজ... এটাই ছিল তার পেশা। এজন্য যার কাছ থেকে যা-ই হাদিয়া মিলে, তা-ই সে সানন্দে পকেটে পুরে নেয়। সেই লোকটি বলে, হজের সময় ঘনিয়ে এসেছে। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজিদের পথপ্রদর্শনের জন্য আমি বের হলাম। দিকনির্দেশনার জন্য কাউকে না পেয়ে আমি হতাশ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আচানক কোত্থেকে একজন তুর্কির আগমন ঘটল। তার দেহের বসন ও মাথার টুপি দেখে আমি বুঝতে পারলাম, লোকটি ধনী নয়; নিতান্ত গরিব কেউ!
আগন্তুক তুর্কি লোকটি বলল, আপনি কি পুরো হজে আমার জন্য দিকনির্দেশনার কাজ করবেন? লোকটি বলল, আমার প্রয়োজন ছিল, তাই আমি আগন্তুকের প্রস্তাব কবুল করলাম। অথচ, আমি জানতাম, এই লোকটার কাছ থেকে খুব একটা হাদিয়া মিলবে না। কিন্তু পরিবার-পরিজনের কথা চিন্তা করে আমি তার কাজে লেগে গেলাম। পুরো হজেই আমি ছায়ার মতো লেগে তাকে হজের কার্যাবলি সম্পাদন করালাম।
আমি তখনই দ্রুত মক্কার গভর্নরের কাছে গেলাম। তার হাতে থলেটি উঠিয়ে দিলাম। কিন্তু থলের মুখ খুলতে না খুলতেই গভর্নর মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন! মাটি থেকে পতিত অবস্থায় গভর্নর কোনোমতে বললেন, সুলতান আবদুল হামিদ খানের সিলমোহর!
হজের মওসুম শেষ। নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার পালা। হজের এই প্রলম্বিত সময়ে লোকটি আমার সাথে তেমন কোনো কথা বলেনি। তার চলন-বলনে বুঝলাম যে, সে খুব ভালো চরিত্রের একজন লোক। যাবারকালে লোকটি আমার দিকে একটি থলে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই থলেটি আপনি গ্রহণ করুন। তবে আমি আপনার চোখের আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি এটি খুলবেন না। এরপর শীগগিরি এটি নিয়ে মক্কার গভর্নরের কাছে যাবেন। যাবার আগে থলের মুখ না খোলার জন্য কঠিন ওয়াদা নিলো। আমি কিংবাক্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। আমি এতোটাই ঘাবড়ে গেলাম যে, আমার শরীরে মৃদু কম্পন শুরু হয়ে গেল! চিন্তা করতে লাগলাম, তাহলে এই তুর্কি লোকটি ছিলেন সুলতান আবদুল হামিদ খান! ছদ্মবেশে এলেন হজ করতে! পুরো হজে কি আমি দৌলতে উসমানিয়্যাহর মহান সুলতানের দিকনির্দেশক ছিলাম!
পুনঃ পুনশ্চ : সুলতান আবদুল হামিদের গোপনে হজ আদায়ের একমাত্র সাক্ষী হলেন ওই দিকনির্দেশক। কিন্তু এই দিকনির্দেশকই হলেন একজন অচেনা-অজানা মানুষ! আহ, কী ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতই না ছিল সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের! রাহিমাহুল্লাহ ওয়া জাযাহু খাইরান।
চিঠিতে সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ খান মক্কার গভর্নরকে লিখেছেন, তিনি যেন আমাকে একটি বড়সড় ঘর দান করেন। এবং আমার ও আমার সন্তানদের জন্য ভালো জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দেন। আর তা শুধুমাত্র আমার পরোপকারের কারণে। পুনশ্চ : সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ হলেন এমন উসমানি সুলতান, একমাত্র যার কপালেই হজ করার সৌভাগ্য নসিব হয়েছে। আর কোনো সুলতানই হজ করতে পারেননি। এর অবশ্য সঙ্গত কারণ রয়েছে। অন্য আরেকদিন আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

সূত্র: السلطان عبد الحميد المفترى عليه دراسة من خلال الوثائق: উমর ফারুক ইলমাজ * ذكريات السلطان عبد الحميد : মুরা দ দোমান


Collect from Abdullah H Kafi
ছদ্মবেশে যে ওসমানীয় সুলতান বাইতুল্লাহর মেহমান! ছদ্মবেশে যে ওসমানীয় সুলতান বাইতুল্লাহর মেহমান! Reviewed by Tottho Projukti on April 29, 2020 Rating: 5
Powered by Blogger.