ইসলামের প্রথম রাষ্ট্র দূত
ইসলামের প্রথম রাষ্ট্র দূত মুসআব রাদ্বি আল্লাহ আনহু এর পরিচয়:
প্রতিকী ছবি |
পবিত্র মক্কায় ইসলাম প্রচারের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতেন। সব রকম বাধা-বিপত্তি দেয়া হতো উনাকে। সীমাহীন কষ্ট ও অপমান করা হতো মহানবীজি আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে। ইসলাম প্রচারে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও স্বগোত্রীয় লোকদের কাছ থেকে যেমন সাড়া পাবেন ভেবেছিলেন তা তো পাননি বরং উল্টো দুঃখ-ব্যথা পেয়েছিলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তবে উল্লেখযোগ্য ও সমাজের উচ্চ পর্যায়ের কিছু সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করায় উনার হতাশা অনেকটা কেটে গিয়েছিল। মক্কার লোকদের থেকে তিনি ভালো আচরণ পাননি কখনো কিন্তু এখান থেকে ভালো আচরণ না পেলেও দূরবর্তী মদিনার লোকেরা মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডাকে সাড়া দিতে থাকেন। প্রতি বছর হজের মৌসুমে মদিনাবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় তাদের কাজকর্ম দেখভালের জন্য এবং তাদের ধর্মীয় বিষয়াদি শেখানোর জন্য একজন শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
অতঃপর হিজরতের পূর্বে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের রাদ্বি আল্লাহ আনহু কে রাষ্ট্রদূত ও মদিনার মুসলমানদের শিক্ষক হিসেবে ইয়াসরিবে (মদিনার প্রাচীন নাম) পাঠান। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনা আগমনের আগে এক বছর যাবত মুসআব রাদ্বি আল্লাহ আনহু মদিনার মুসলমানদের সার্বিক দেখাশোনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মাঝে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে উনাকে ইসলামের প্রথম রাষ্ট্রদূত বলাহয়।
মুসআব রাদ্বি আল্লাহ আনহু এর জন্মঃ
হিজরতের ২৭ বছর আগে মুসয়াব রাদ্বি আল্লাহ আনহু মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। উনার বংশ ছিল কুরাইশের অভিজাত শ্রেণীর বনি আবদুদ্দার গোত্রে। তিনি ছোটবেলা দেখে বেশ আদর-যত্ন ও বিলাসিতায় বেড়ে ওঠেন। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি তৎকালীন চার হাজার দেরহাম মূল্যের জামা গায়ে দিতেন। উন্নতমানের সুরভি ব্যবহার করতেন। তিনি কোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সে পথ ঘ্রাণে আমোদিত হয়ে যেত। পথিক যাওয়ার সময় ঘ্রাণ পেয়ে বুঝতে পারতেন এ পথ দিয়ে মুসআব হেঁটে গেছেন। তিনি বেশ সুদর্শন ও সুঠামদেহী ছিলেন। বন্ধুদের সাথে ভালো গান করতেন। কণ্ঠস্বর ছিল বেশ কোমল ও হৃদয়গ্রাহী।
মুসআব রাহিমুল্লাহর ইসলাম গ্রহণ ও মৃত্যুঃ
ইসলামের সূচনাপর্বেই মুসআব ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমান হওয়ার কারণে উনার পরিবার, সমাজ ও আত্মীয়রা তাকে পৈশাচিক নির্যাতন করে। পরে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ পেয়ে তিনি ইথোপিয়ায় হিজরত করেন। ইথোপিয়া থেকে ফিরে এসে মদিনায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিয়োগ পান। তৃতীয় হিজরিতে উহুদের যুদ্ধে মুসআব রাদ্বি আল্লাহ আনহু মুসলমানদের পতাকা বহন করেন। বীরদর্পে সংগ্রাম ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। কাফেররা যখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর হামলা করতে আসে তখন তিনি দুর্দমনীয়ভাবে তাদের প্রতিহত করেন। কিন্তু প্রতিহত করতে করতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।
তিনি মুশরিক ইবনে কুমাইয়া এর হাতে শহীদ হন। তিনি যখন যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করতেছিলেন তখন কাফির ইবনে কুমাইয়া এসে তার ডান হাত কেটে ফেলেন, তারপর মুসয়াব রাদ্বি আল্লাহ আনহু তার বামহাত দিয়ে তার বুকের সাথে পতাকাটা ধরে রাখেন। অতঃপর ইবনে কুমাইয়া যখন উনার বাম হাতও কেটে ফেলেন তখন তিনি নিজের দুটি বাহু দিয়ে পতাকাটিকে বুকের সাথে আকড়ে ধরেন। যখন মুশরিক ইবনে কুমাইয়া তার পতাকা ধরে রাখার দৃঢ় চেষ্টা দেখলো তখন সে উনার বুকের মধ্যে বর্শা দিয়ে আঘাত করে উনাকে শহীদ করেন।
ইসলামের প্রথম রাষ্ট্র দূত
Reviewed by Khalilur Qaderi
on
October 13, 2018
Rating: