চেঙ্গিস খানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

চেঙ্গিস খানের দেশ মঙ্গোলিয়া। বলা হয়, ১১৬২ থেকে ১১৬৭ সালের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে ইয়েসুগির ঘরে জন্ম নেন তেমুজিন। বিশ্বমানচিত্রে আজকের মঙ্গোলিয়া একটি ডিমের আকারের দেশ। এর অবস্থান মধ্য এশিয়ায়। চীন ও রশিয়ার মাঝখানে। আয়তনে আলাস্কার দ্বিগুণ। মঙ্গোলিয়ার বেশির ভাগটাই ঘাসে ঢাকা শুকনো মালভূমি। সোজা কথায় পর্বতের ওপর অপেক্ষাকৃত সমতল ভূমি। এর পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ পাহাড়ি এলাকা। দক্ষিণাংশের চীন সীমান্ত এলাকায় রয়েছে দুর্গম গোবি মরুভূমি। মোটামুটিভাবে দেশটির ১ শতাংশেরও কম ভূূমি চাষাবাদের উপযোগী।



চেঙ্গিস খান


আজকের দিনে মঙ্গোলিয়ায় গেলে দেখা যাবে এর বেশির ভাগ এলাকায়ই জনবসতি নেই। কোথাও কোথাও এখনো হঠাৎ করে চোখে পড়তে পারে যাযাবর রাখালগোত্রের লোকেরা তাদের পশুচারণ করে অতি কষ্টের জীবন যাপন করছে। ধূলিঝড়, খরা, প্রবল শীত তাদের নিত্যকষ্টের কারণ। প্রকৃতপক্ষে এরা আজ যে ধরনের জীবন যাপন করছে, তা শত বছর আগের তাদের পূর্বপুরুষদের জীবন যাপনের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। তার পরও একটা সময় ছিল, যখন এই বিচ্ছিন্ন নির্জন মঙ্গোলিয়া ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভূমিসাম্রাজ্য। আর ইতিহাস খ্যাত অন্যসাধারণ সামরিক ব্যক্তিত্ব চেঙ্গিস খান ছিলেন সে সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কারিগর।

চেঙ্গিস খানের জন্ম ১১৬২(?) সালে। মা হো’য়েলুন। বাবা ইয়েসুগি। ইয়েসুগি ছিলেন মোঙ্গলদের এক গোত্রপ্রধান। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় তেমুজিন। কারো মতে, তেমুসিন। স্থানীয় ভাষায় তেমুজিন শব্দের অর্থ ‘আয়রন ওয়ার্কার’ বা ‘ব্ল্যাকস্মিথ’। আমরা যাকে বলি কর্মকার। তেমুজিন অর্থাৎ চেঙ্গিস খানের জন্ম এমন সময় হয়, যখন গোটা মঙ্গোলিয়ায় ছিল শুধু উপজাতীয় যাযাবর পশুপালক কিছু গোত্রের বাস। তখন সবচেয়ে শক্তিশালী গোত্রটির নাম ছিল বোরজিগিন। এ গোত্রের প্রধান ছিলেন সাহসী যোদ্ধাব্যক্তিত্ব কাবুল খান। ‘খান’ তার উপাধি, এর অর্থ ‘নেতা’। কাবুল খানের পুত্র ইয়েসুগি। ইয়েসুগি বোরজিগিনেরই একটি উপগোত্র ‘কিয়াত’-এর প্রধান। বলা হয়, ১১৬২ থেকে ১১৬৭ সালের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে ইয়েসুগির ঘরে জন্ম নেন তেমুজিন।
১১৭৫ সালের দিকে তেমুজিন তখন ১৩ বছর বয়েসী এক বালক। ইয়েসুগি ঘোষণা দিলেন, তেমুজিনকে একজন পাত্রী খুঁজে বের করে বিয়ে করতে হবে। বাবা ও ছেলে বের হলেন পাত্রীর খোঁজে। কয়েক দিন ভ্রমণের পর এরা খোঁজ পেলেন মোঙ্গলদের অতিথিপরায়ণ এক উপজাতির। অল্প দিনেই তেমুজিন এ গোত্রের সরদারের মেয়ে বর্তির খোঁজ পান। বর্তি হন তার বাগদত্তা। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় উপজাতীয় তাতার গোষ্ঠীর লোকেরা ইয়েসুগিকে বিষ খাইয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পূর্ব-মঙ্গোলীয় শুষ্ক তৃণময় প্রান্তরে তাতারেরাই মোঙ্গলদের চরম শক্তিধর প্রতিপক্ষ। তেমুজিন শপথ নেন এর প্রতিশোধ নেবেন। সে লক্ষ্যেই বাগদত্তা বর্তিকে ছেড়ে চলে আসেন নিজ গোত্রে। নিজেকে ঘোষণা করেন গোত্রের নেতা।
উপজাতীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা এই বালককে নেতা মানতে অস্বীকার করেন। শুধু তাই তার পরিবারের লোকজনসহ নির্জন তৃণভূমিতে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। পরবর্তী কয়েক বছর চরম অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাতে হয় বনের ফলমূল খেয়ে। শিকার করা পশুর মাংস খেয়ে। একদিন শিকার নষ্ট করে দেয়ায় ঝগড়াঝাঁটি করে তেমুজিন তার বৈমাত্রেয় ভাই বেখতারকে হত্যা করে। জীবন যাপন এতটাই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল যে, খাবার চুরির জন্য সে নিজের ভাইকেও হত্যা করেছে।
১১৮২ সালের দিকে এক হামলার ঘটনায় তেমুজিন বন্দী হন তার বাবার সাবেক মিত্র তায়িচুয়েটের হাতে। এক প্রহরীর সহায়তায় সেখান থেকে পালাতেও সক্ষম হন। এ প্রহরীর ছেলে বিলুয়ান পরে এক সময় চেঙ্গিস খানের বাহিনীর একজন জেনারেল হন। তায়িচুয়েটের কাছ থেকে পালানোর পর তেমুজিনের বীরত্বের কথা চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই জানতে পারে চেঙ্গিস খান এক দুর্ধর্ষ মানুষ। এর কিছু দিন পর একদল হামলাকারী সামান্য খাবার ও একটি ঘোড়া রেখে বাকি সব লুটে নিয়ে যায়। চেঙ্গিস খান তাদের তাড়া করে ধরতে পারেননি। এই তাড়া করার সময় তার দেখা হয় বগোরচি সামের এক ধনীর সন্তানের সাথে। এরা পরস্পরকে ভ্রাতৃত্ববোধে আলিঙ্গন করেন। বগোরচি তাকে চুরি যাওয়া ঘোড়াগুলো উদ্ধার করে দেয়। কিন্তু হামলাকারীদের ধরতে পারেননি। এর চার বছর পর বর্তিকে বিয়ে করেন চেঙ্গিস খান।
ফঙ্কিরাত সম্প্রদায়ের সরদারের কন্যা বর্তির সাথে বিয়ে হওয়ার সময় তেমুজিনের বয়স ১৬। বর্তির ঘরে তেমুজিনের ছিল চার পুত্র : জোচি (১১৮৫-১২২৭), চাগাতাই (?- ১২৪৯), ওগোদি (?- ১২৪১) এবং তলুই (১১৯০-১২৩২)। তেমুজিনের অন্য স্ত্রীদের ঘরে তার আরো সন্তান ছিল। একসময় বর্তিকে মারফিট নামে অন্য এক গোত্রের লোকেরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। চেঙ্গিস খান পরে তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। সে যা-ই হোক চেঙ্গিসে খানের ব্যক্তিজীবন কম বৈচিত্র্যময় ছিল না। একসময় নানা ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি মোঙ্গলদের ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত করেন। শুরু হয় তার বিজয় পর্ব।
চেঙ্গিস খানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় চেঙ্গিস খানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় Reviewed by Khalilur Qaderi on May 26, 2018 Rating: 5
Powered by Blogger.